নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত
ইসলাম ধর্মে নামাজের গুরুত্ব অপরিসিম। ঈমান গ্রহন করার পর একজন মুসলমানের জন্য সর্ব প্রথম বিধান হচ্ছে নামাজ আদায় করা। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মৃত্যু, যা কবর জীবনে পদার্পনের মাধ্যম। আর সেখানে সর্ব প্রথম নামাযেরই হিসাব লওয়া হবে। হাদীসের ভাষ্যমতে যার নামাজ ঠিকমত পাওয়া যাবে তার সবকিছুই ঠিক বলে বিবেচিত হবে। ররহোশ أل يبيحبست ثّ انعجذيٕو انميبيخ انصهٕح ছআে র্তবণি সীেদহা মাঠে বিচার দিবসে সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। নামাজ এত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হওয়া সত্বেও অন্যান্য বিধানাবলীর মতই বর্তমান সমাজে নামাজের প্রতি অত্যন্ত উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। সে হিসেবে আমরা বর্তমান বাস্তবতায় তিন ধরনের নামাজী দেখতে পাই। (১) অসংখ্য মুসলিম, যারা নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয় কিন্তু মোটেও নামাজ পড়ে না (২) যারা নামাজ পড়ে কিন্তু জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার এহতেমাম করে না। (৩) জামাতের সহিত পড়ে। কিন্তু অবহেলা ও অসুন্দর ভাবে পড়ে। নামাজের গুরুত্ব:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) নবী কারিম (সা) এর এরশাদ বর্ণনা করেন- ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত। সর্ব প্রথম কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সাক্ষ্য দেয়া অর্থাৎ এই কথা স্বীকার করা যে, আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। অত:পর নামাজ কায়েম করা যাকাত আদায় করা, হজ্ব পালন করা, রমজান মাসের রোযা রাখা। (বুখারী,মুসলিম) গুনাহ মাফে নামাজের ভুমিকা:- হযরত আবু যর (রা:) হতে বর্ণিত, একবার শীত কালে হযরত নবী কারিম (সা:) বাহিরে তাশরীফ আনিলেন। তখন গাছ হতে পাতা ঝরতেছিল। তিনি গাছের একটি ডাল ধরলেন, ফলে উহার পাতা আরও বেশী করে ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, হে আবু যর! মুসলমান বান্দা যখন ইখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহসমুহ এমন ভাবে ঝরে যায় যেমন এই গাছের পাতাসমুহ ঝরে পড়ছে। (তারগীব: আহমদ) অন্য হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রা) নবী করিম (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার ইরশাদ করলেন বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির দরজার সম্মুখে একটি নদী প্রবাহিত থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা বাকী থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম (রা:) আরজ করলেন, কিছুই বাকী থাকবে না। হুজুর (সা:) ইরশাদ করেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীর অবস্থাও এই রূপ যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু তার বদৌলতে গুণাহসমুহ মিটিয়ে দেন। (বুখারী,মুসলি, তিরমিযি)
আবু মুসলিম (রহ:) বলেন, আমি হযরত আবু উমামা (রা:) এর খেদমতে হাজির হলাম, তিনি মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। আমি আরজ করলাম যে, আমার নিকট এক ব্যক্তি আপনার পক্ষ হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আপনি নবী করিম (সা:) এর নিকট হতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযু করে অত:পর ফরজ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ঐ দিনের ঐ সমস্ত গুনাহ যা চলাফেরার দ্বারা হয়েছে, যা হাতের দ্বারা করিয়াছে, যা কানের দ্বারা হয়েছে, যা চক্ষু দ্বারা করেছে এবং ঐ সমস্ত গুনাহ যে গুলোর খেয়াল তার অন্তরে পয়দা হয়েছে সব মাফ করেদেন। হযরত আবু উমামা (রা:) বলেন, আল্লাহর কসম আমি এই কথা নবী করিম (সা:) এর নিকট হতে কয়েকবার শুনেছি। (তারগীব, আহমদ)। নামাজের দ্বারা গুনাহ মাফের ব্যপারে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে- অর্থ: দিনের উভয় অংশে এবং রাতের একাংশে নামাজ কায়েম কর। নিশ্চয় নেক আমলসমুহ গুনাহ সমুহকে দুর করে দেয়। আর ইহা নসীহত গ্রহণ কারীদের জন্য।
এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো, নামাজ আদায়ের মাধ্যমে গুনাহসমূহ মাফ হওয়া তো নিশ্চিত। কিন্তু আমাদের নামাজ সেই পর্যায়ের কিনা তা ভাববার বিষয়। সুতরাং নামাজের দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে ধারণা করে গুনাহর প্রতি উৎসাহিত হওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের নামাজের যে অবস্থা আল্লাহপাক যদি দয়া করে কবুল করেন সেটাই অনেক বড় পাওয়া। সমস্যা সমাধানে নামাজ: হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, নবী করিম (সা:) যখন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তৎক্ষনাৎ তিনি নামাজে মনোনিবেশ করতেন। (দুররে মনসুর, আবু দাউদ, আহমদ) ইরশাদ হচ্ছে- আর তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর, ধর্য্য এবং নামাজের মাধ্যমে। (সুরা বাকারা, আয়াত -১৫৩) বর্ণিত আছে যে, কুফা নগরীতে একজন কুলি ছিল। যার উপর মানুষের খুব আস্থা ছিল। বিশস্ত হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীদের মালপত্র, টাকা পয়সা ইত্যাদি বহন করত। একবার সে সফরে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে একজন লোকের সহিত সাক্ষাত হইল। লোকটি জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যাচ্ছো? কুলি বলল, অমুক শহরে। লোকটি বলল আমিও যাব। তুমি কি তোমার খচ্চরে আমাকে নিতে পার? কুলি রাজি হয়ে গেল। চলতে চলতে যখন তারা এক জঙ্গলের নিকট পৌছলো। ঐ লোকটি সওয়ারী হতে নেমে কোমর হতে খঞ্জর বাহির করে কুলিকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। কুলি বেচারা অনেক অনুনয় বিনয় করল,কিন্তু কোন কাজ হলো না। নিশ্চিত বিপদ দেখে কুলি ব্যক্তিটি ২ রাকাত নামাজ পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে অনুমতি দেয়া হলো। কুলি নামাজ পড়তে আরম্ভ করল। আলহামদুশরীফ পড়ার পর কোন সুরা মনে আসছিল না। ঐ দিকে জালেম লোকটি দাঁড়িয়ে তাড়া করছিল যে, জলদি নামাজ শেষ কর। এদিকে মনের অজান্তেই কুলির জবান হতে এই আয়াত বাহির হল ٍاي ضطشًان ي সুরা নামাল, আয়াত-৬২) সে এই আয়াত পড়ছিল আর ক্রন্দন করছিলো। এমন সময় চকচকে লোহার টুপি পরিহিত একজন আরোহী সামনে আসল। সে বর্শা দিয়ে সেই জালেম লোকটিকে হত্যা করল। কুলি আরোহী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করল, ভাই আপনি কে? আরোহী বলল, আমি আপনার তেলাওয়াতকৃত আয়াতের গোলাম। এখন আপনি বিপদ মুক্ত। যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন। এই বলে আরোহী চলে গেল। সুবহানাল্লাহ প্রকৃতপক্ষে নামাজ এমনই বড় দৌলত যে, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি সহ দুনিয়ার অনেক মুসিবত হতেও নাজাতের কারণ হয়। আর অন্তরের শান্তি তো লাভ হয়েই থাকে। ইবনে সীরিন (রহ:) বলেন যদি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করা এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ার ইখতিয়ার দেওয়া হয়, তবে আমি নামাজকেই গ্রহণ করব। কারণ, জান্নাতে প্রবেশ করাতো আমার নিজের খুশির জন্য আর দুই রাকাত নামাজ হলো আমার মালিকের খুশীর মাধ্যম।

জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির জন্য নামাজ:
হুজুর (সা:) এরশাদ করেন, যখন নামাজের সময় উপস্থিতে হয় তখন একজন ফেরেস্তা ঘোষনা করেন যে, হে আদম সন্তান! উঠ এবং জাহান্নামের ঐ আগুনকে নিভাও যা তোমাদের গুনাহের কারনে নিজেদের উপর প্রজ্জলিত করেছ। অতএব দ্বীনদার লোকেরা উঠে ওযু করে এবং নামাজ পড়ে। যদ্দরুন তাদের (সকাল হতে যোহর পর্যন্ত) গুনাহ সমুহ মাফ করে দেওয়া হয়। অনুরূপ ভাবে যোহরের সময়, আসরের সময়, মাগরিবের সময়, এশার সময় মোট কথা প্রত্যেক নামাজের সময় এরূপ হতে থাকে। (তারগীব, তাবরানী)
জান্নাত প্রাপ্তিতে নামাজ:
হুজুরে পাক (সা:) এরশাদ করেন- আল্লাহ তায়ালা ফরমান, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি এবং প্রতিজ্ঞা করেছি, যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে আমি তাকে নিজ দায়ীত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে এই নামাজ সমূহ আদায় করবে না তার ব্যপারে আমার কোন দায়িত্ব নাই। (দুররে মনসুর, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
পরিবারস্থ লোকদের নামাজের আদেশ ও রিযিক বৃদ্ধিতে নামাজ:
শুধু নিজে নামাজ আদায় করলে হবে না বরং পরিবারস্থ লোকদেরকে নামাজের আদেশ করতে হবে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে, হে রাসুল! আপন পরিবারকে নামাজের আদেশ করুন এবং নিজেও উহার প্রতি যত্নবান হউন। নিশ্চয় আপনার নিকট আমি রুজি চাইনা, রুজিতো আমি আপনাকে দান করি। (সুরা ত্বহা, আয়াত-১৩২) অন্য হাদীসে সন্তানদেরকে সাত বছর বয়স হতে নামাজের তাগিদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ১০ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে বা অলসতা করলে শাসন করার কথা বলা হয়েছে। উক্ত আয়াতের শেষাংশে নামাজীর জন্য রিযিক বৃদ্ধির শুসংবাদও দেয়া হয়েছে।

নামাজ না পড়ার ভয়াবহ পরিণাম:
নবী করিম (সা:) ইরশাদ করেন- ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, যে ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার যেন পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবকিছুই লুট হয়ে গেল। (তারগীব, ইবনে হিব্বান)

গুনাহ বর্জনে নামাজের ভুমিকা:
اٌ انصهٕح رُٓٗ عٍ انفحشبء ٔانًُكش অর্থাৎনিশ্চয় নামাজ নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা হতে ফিরে রাখে। উক্ত আয়াত সম্পর্কে নবী করিম (সা:) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তির নামাজ এরূপ হয় না এবং তাকে অন্যায় অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে না তা নামাজই নয়। (দুররে মনসুর, ইবনে হাতিম)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে উত্তমরূপে নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমীন

হাফেজ মাওলানা মোস্তাক আহমদ সাহেব
(শিক্ষক আত্র জামিয়া)

Loading